বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেকেই যে বাধাটির সম্মুখীন হয় তা হলো, ইংরেজি কিংবা বিদেশি ভাষায় দক্ষতা না থাকা।
আজকের এই আর্টিকেলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ভাষাগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানবো। এখানে যে শুধু ইংরেজি ভাষা শেখার গুরুত্ব ও উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো, তা নয়। ইংরেজি ছাড়া বিদেশে পড়াশোনা, চাকরি কিংবা স্থায়ী বসবাসের জন্য অন্যান্য যে ভাষাগুলোতে পারদর্শী হওয়া প্রয়োজন তা সম্পর্কেও জানাবো।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা জানার আগে আসুন ভারতবর্ষে এই ভাষার আগমনের ইতিহাস থেকে ঘুরে আসি।
সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ইংরেজরা ভারতবর্ষে অনুপ্রবেশ করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় ১০০ বছর ইংরেজরা আমাদের এই ভারতবর্ষ শাসন করে গেছে। সেই সময় থেকেই মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজি ভাষার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়।
তৎকালীন সময়ে অন্যদের তুলনায় ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারা ভারতীয়দের ভালো বেতনে চাকরির সুযোগসহ অন্যান্য নানাবিধ সুবিধা দেওয়া হতো। এভাবেই এই উপমহাদেশে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার চাহিদা তৈরি হয়, যা এখনো ভারতীয় উপমহাদেশসহ পৃথিবীর সব জায়গাতেই বিদ্যমান।
যেহেতু ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং সব দেশের দাপ্তরিক কাজে ও যোগাযোগে ইংরেজি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার পরিকল্পনা করলে ইংরেজি শেখার কোনো বিকল্প নেই।
আপনি ইংরেজিতে কতটা পারদর্শী তা মূল্যায়নের জন্য বিশ্বের সব দেশ প্রধানত দুইটি মানদণ্ড অনুসরণ করে। তার একটি হলো IELTS (International English Language Testing System) এবং অন্যটি হলো TOEFL (Test of English as a Foreign Language)। এই উভয় পরিক্ষার ফলাফলের মেয়াদ ২ বছর থাকে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা কিংবা চাকরির সুযোগ প্রদানের জন্য যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো Commonwealth-ভুক্ত দেশগুলো ইংরেজিতে দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য IELTS পদ্ধতিটা বেশি অনুমোদন করে। আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো দেশগুলোতে TOEFL বেশি গ্রহণযোগ্য।
আপনি পৃথিবীর যে দেশেই উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার পরিকল্পনা করেন আপনাকে ইংরেজি ভাষায় অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। কেননা এসব দেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্সগুলো ইংরেজি ভাষায় সাজানো থাকে। আর এই দক্ষতা প্রমাণের জন্য IELTS অথবা TOEFL পরীক্ষায় ভালো স্কোর পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
এছাড়া যারা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা কিংবা আশেপাশের দেশগুলোর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদের কোনো বিষয়ে পড়তে চান তাদের জন্য GRE সার্টিফিকেট প্রয়োজন। আর যারা ব্যবসায় শিক্ষা কিংবা মানবিক অনুষদের কোনো বিষয়ে পড়তে চান তাদের জন্য GMAT অবশ্যক। এ বিষিয়ে আমরা এই আর্টিকেলের শেষাংশে সংক্ষেপে জানবো।
উপরের অংশে হয়তো বুঝতে পেরেছেন বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা কত বেশি। এবার আমরা জানবো, কিভাবে IELTS বা TOEFL শেখা যায়।
প্রথমেই বলে রাখি, IELTS কিংবা TOEFL পরীক্ষায় ভালো স্কোর পেতে বাড়িতে নিজ উদ্যোগে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। তবে তা অনেক বেশি ধীরগতির হবে। এজন্য এ বিষয়ক কোনো একটি কোর্সে ভর্তি হয়ে প্রস্তুতি নিলে তা সবচেয়ে ভালো হয়।
বাংলাদেশের অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান আছে যারা কয়েক মাস মেয়াদি কোর্স করার সুযোগ দিয়ে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশে নিয়োজিত যুক্তরাজ্যের দূতাবাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত British Council থেকেই IELTS কোর্স সম্পন্ন করা যায়।
এই লিংকে ক্লিক করে British Council Bangladesh এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে এ বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারবেন।
IELTS পরীক্ষায় মূলত ৪টি বিষয় মূল্যায়নের মাধ্যমে একজন পরীক্ষার্থীর সামগ্রিক স্কোর প্রদান করা হয়। এই ৪টি বিষয় হলো Listening, Speaking, Reading এবং Writing। এই স্কোরকে মূলত band বলা হয়।
আসলে দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সভেদে ন্যূনতম IELTS স্কোর আলাদা হয়। তবে বেশিরভাগ দেশের স্টুডেন্ট ভিসা পেতে এটি মোটামুটি ন্যূনতম ৬ থাকা আবশ্যক। তবু আপনাদের সুবিধার্থে কিছু দেশের তালিকা দেওয়া হলো।
দেশের নাম |
ন্যূনতম IELTS স্কোর |
যুক্তরাষ্ট্র |
6.5 |
যুক্তরাজ্য |
6.0 |
কানাডা |
6.0 |
অস্ট্রেলিয়া |
6.5 |
ফ্রান্স |
6.5 |
জার্মানি |
6.5 |
জাপান |
6 |
উপরে উল্লখিত দেশের বাইরের কোনো দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়তে চাইলে ইন্টারনেট সার্চ করে Minimum Requirement সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
উপরে উল্লখিত band score শুধুমাত্র সে দেশের স্টুডেন্ট ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেতে হলে কিংবা স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে চাইলে আরো বেশি স্কোর প্রয়োজন। আর এই স্কোর দেশ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোর্স ও স্কলারশিপের মানের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, পড়াশোনা কিংবা কর্মক্ষেত্রে শুধু বাংলা ভাষায় পারদর্শীতা থাকলেই সফলতা মিলে না। সেই সাথে দরকার হয় ইংরেজি ভাষার দক্ষতাও।
তবে বিশ্বায়নের এই যুগে, শুধু বাংলা আর ইংরেজি ভাষা দিয়ে বেশিদূর এগোনো সম্ভব নয়। দেশে কিছুটা সম্ভব হলেও বিদেশে তা কল্পনা মাত্র।
আসুন আপনাদের একটি কাল্পনিক গল্প বলি। মনে করুন, আপনি ফ্রান্সে গেলেন পড়াশোনার জন্য। আপনি ইংরেজিতে ভালো দক্ষ এবং IELTS ও TOEFL এর স্কোর-ও ভালো। সে দেশে চলাফেরা কিংবা কাজের জন্য আপনাকে অনেক স্থানীয় মানুষের সাথে মিশতে হবে। কিন্তু সবাই যে ইংরেজি জানবে, বিষয়টি এমন নয়। আবার তারা বাংলাও জানে না।
এমতা অবস্থায় কারো সাথে যোগাযোগ কিংবা কথা বলতে চাইলে আপনি পড়বেন গোলকধাঁধায়। শুধু ইংরেজি ভাষাটা জানলেই বিদেশে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়। যে দেশে যেতে চান আগেভাগে সে দেশের ভাষাটাও হালকা-পাতলা শিখে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
এছাড়া বিদেশে পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নিজের খরচ বহন করতে বিভিন্ন ধরনের পার্ট-টাইম ও ফুল-টাইম জব খুঁজে থাকে। এক্ষেত্রে যারা সে দেশের স্থানীয় ভাষা মোটামুটি জানে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে শুধু ইংরেজি জানা প্রার্থীর চেয়ে তাকে বেশি বেতন প্রদান করা হয়।
কয়েকটি জনপ্রিয় ও চাহিদাপূর্ণ বিদেশি ভাষা সম্পর্কে নিচে জানানোর চেষ্টা করলাম।
আপনি যদি ফ্রান্স কিংবা ইউরোপের কোনো দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে আগ্রহী হন তাহলে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি ফরাসি বা ফ্রেঞ্চ ভাষার দক্ষতা আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।
বিশ্বে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে ইংরেজির পরেই ফরাসি ভাষার অবস্থান। ফলে আপনি খুব সহজেই বিশ্বের অনেক মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং শিক্ষা কিংবা কর্মক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো নেটওয়ার্কিং গড়ে তুলতে পারবেন।
UNICEF, UNESCO, WHO, UN এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি ভাষাকেও ব্যবহার করা হয়। ফলে আপনি এসব সংস্থায় কাজের সুযোগ পেতে পারেন।
এছাড়াও ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কানাডাসহ ইউরোপের অনেক দেশের অফিসিয়াল ভাষা হলো ফরাসি বা ফ্রেঞ্চ। ফলে আপনি যদি সেসব দেশে পড়াশোনা করতে যান তাহলে সেখানে অনেক বেশি কাজের সুযোগ পাবেন এবং স্থানীয়দের সাথে ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ থেকে ফ্রেঞ্চ ভাষা শেখার কয়েকটা মাধ্যম বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ (Alliance Française de Dhaka)।
এটি ফ্রাঞ্চ ভাষা শেখানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নিয়োজিত একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেটি সরাসরি ফ্রান্স দূতাবাসের সাথে জড়িত। এই প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক মানের ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজের উপরে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করতে পারবেন।
এছাড়াও আরও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ফ্রেঞ্চ বা ফরাসি ভাষার বিভিন্ন মেয়াদি কোর্স অফার করে থাকে। যেমন-
তাছাড়া Duolingo নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে বাড়িতে বসে ফরাসি ভাষা শিখতে ও চর্চা করতে পারবেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে জার্মান ভাষা অন্যতম। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ যায় জার্মানে। সেখানকার পড়াশোনার মান, কাজের সুযোগ, ও অন্যান্য সুবিধার জন্য সবারই পছন্দের তালিকায় থাকে জার্মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
তাই আপনি যদি জার্মানে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান কিংবা সেখানে কাজের জন্য যান তাহলে আগে থেকেই জার্মান ভাষা শিখে নেওয়াটা জরুরি।
জার্মান ভাষায় পারদর্শীতা আপনাকে ভালো কাজ পেতে কিংবা সম্পূর্ণ বিনা খরচের বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেতে সাহায্য করবে।
জার্মান ভাষার দক্ষতাকে কয়েকটি গ্রেডে মূল্যায়ন করা হয়। যেমন A1, A2, B1, B2, C1, C2। এখানে সর্বনিম্ন ধাপ হচ্ছে A1 এবং সর্বোচ্চ ধাপ হচ্ছে C2। জার্মানে যাওয়ার আগে অন্তত B2 গ্রেড অর্জন করা উচিত, তাহলে সেখানে আপনি অনেক সুযোগ পাবেন।
জার্মান ভাষার অত্যন্ত জনপ্রিয়তার কারণে বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান জার্মান ভাষা শেখানোর কোর্স চালু করেছে।
তবে বাংলাদেশে অবস্থিত জার্মান দূতাবাস কর্তৃক স্বকৃত গ্যেটে ইনস্টিটিউটে (Goethe Institut) আন্তর্জাতিক মানের জার্মান ভাষা শেখানো হয়। এটি ঢাকার শুক্রাবাদে (পান্থপথ) অবস্থিত।
এছাড়াও উপরে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্যান্য বিদেশি ভাষার পাশাপাশি জার্মান ভাষা শেখানো হয়।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য চাহিদাপূর্ণ কিছু বিদেশি ভাষা-
এছাড়া আপনি যে দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে ইচ্ছুক সে দেশে স্থানীয়ভাবে যে ভাষা বেশি প্রচলিত সে ভাষায় অন্তত কিছু বাক্য বলা এবং বুঝতে পারা শিখে নেওয়া খুবই জরুরি।
GRE এর পূর্ণরূপ হলো Graduate Record Test, যা একটি কম্পিউটারাইজড পরীক্ষা পদ্ধতি। এটি মূলত আমেরিকা, কানাডার মতো দেশগুলোতে ব্যাচেলর শেষ করার মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজন।
যারা আমেরিকায় বিজ্ঞান অনুষদের কোনো বিষয়ে মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি সম্পন্ন করতে চান তাদের IELTS বা TOEFL এর পাশাপাশি GRE স্কোর প্রয়োজন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিন আবেদন করার সময় এই স্কোর উল্লেখ করতে হয়।
GRE পরীক্ষাটি ৩টি ধাপে সম্পন্ন হয়। সেগুলো হলো-
বাংলাদেশের কিছু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে GRE এর কোচিং করানো হয়। আপনি ইন্টারনেটে খুঁজলে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম দেখতে পাবেন।
এটিকে GRE এর সাথে তুলনা করা যায়। GMAT এর পূর্ণরূপ হলো Graduate Management Admission Test, যা আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যবহৃত একটি দক্ষতার মানদণ্ড।
যারা অন্যদেশ থেকে গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা শখার কোনো বিষয়ে পড়তে চান তাদের জন্য GRE এর পরিবর্তে GMAT স্কোর প্রয়োজন হয়।
GMAT এর পরীক্ষা ৪টি ধাপ থাকে। সেগুলো হলো-
এই উভয় পরিক্ষার স্কোরের মেয়াদ থাকে ৫ বছর। তবে IELTS ও TOEFL এর মেয়াদ থাকে ২ বছর।
আশা করি, উপরের এই লম্বা আলোচনা পড়লে আপনি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ভাষাগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে জানতে পারবেন।
এছাড়াও বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কিভাবে কোর্স বাছাই করতে হয় এবং এ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পেতে আমাদের ব্লগটি ঘুরে দেখতে পারেন। আশা করি লেখাগুলো আপনাদের উপকার হবে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার মান, শিক্ষার পরিবেশ, কাজের সুযোগ, গবেষণার সুযোগ ভালো হওয়ায় প্রতিবছর এইচএসসির পর বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়।
আপনিও যদি এইচএসসি কিংবা স্নাতক শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার কথা ভাবেন তাহলে আজকের ব্লগটি আপনার জন্য খুবই উপকারী হবে। বিশেষ করে এইচএসসির পরে বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
আজকের এই ব্লগে আমরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা ও উপায় এবং স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা বিস্তারিত গাইডলাইন উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো।
যেকোনো কাজের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে সে বিষয়ে উত্তম পরিকল্পনার উপরে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই একটি সুন্দর ও গোছালো পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনাটা অবশ্যই লিখিত হলে ভালো হয়।
আর এই পরিকল্পনা এইচএসসি পরীক্ষার পরে শুরু করলে তা অনেক দেরি হয়ে যাবে। এজন্য এইচএসসি পরীক্ষার কমপক্ষে ৬-৮ মাস আগে থেকে পরিকল্পনা করা উচিত।
কেননা, বিদেশে উচ্চশিক্ষা আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে। আর এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মোটেই তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
তাই আপনার হাতে যদি এখনো ৬-৮ মাস সময় থাকে এবং আপনি বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান তাহলে এখন থেকেই পরিকল্পনা শুরু করে দিন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পরিকল্পনা কীভাবে করবেন, তার একটি সুন্দর আউটলাইন দেওয়ার চেষ্টা করবো।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমেই আপনাকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আপনি কেন বিদেশে পড়তে চান তার উত্তর খুঁজে বের করুন।
এলাকার অমুক ভাইয়া বা আপু পড়তে যাচ্ছে, অমুক আত্মীয়ের ছেলে কিংবা মেয়ে পড়তে যাচ্ছে তাই আমাকেও যেতে হবে, এমন চিন্তা থেকে বের হয়ে আসুন।
উচ্চশিক্ষার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ আপনার পরবর্তী জীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাব রাখবে। এছাড়া এখানে আর্থিক সক্ষমতার বিষয়, নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করা, এসব দিক বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তা আপনার জন্য ভালোর পরিবর্তে হিতে বিপরীত হতে পারে।
আগেই বলেছি, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার কথা ভাবলে অন্তত ৬-৮ মাস পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা করা উচিত। পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ এরই একটি অংশ।
পূর্বপ্রস্তুতি বলতে আপনাকে আগে থেকেই নির্ধারণ করতে হবে আপনি কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, কোন বিষয়ে পড়বেন, কোন শহরে থাকবেন ও সেখানকার খরচ কেমন, যে দেশে পড়তে চান সেখানে কী কী ভাষাগত দক্ষতা প্রয়োজন, কোন কোন দেশে কী কী স্কলারশিপের সুযোগ আছে, স্টুডেন্ট ভিসার যোগ্যতা ও আবেদন প্রক্রিয়া ইত্যাদি। আগে থেকেই আপনাকে এসব বিষয়ে অনলাইনে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিতে হবে।
অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইট, ব্লগ, সরকারি পোর্টাল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইটে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এই ব্লগের একাংশে আমরা এসব তথ্য-ও শেয়ার করবো।
বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ হয় যে বিষয়টি তা হলো ভাষাগত দক্ষতা অর্জন। যেহেতু ইউরোপ ও আমেরিকার অধিকাংশ দেশগুলোতে ইংরেজি ভাষা ব্যবহৃত হয় সেজন্য ভাষাগত দক্ষতা বলতে মূলত ইংরেজি ভাষায় পারদর্শীতাকে বুঝানো হয়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার মানদণ্ড হিসেবে দেশগুলো IELTS ও TOEFL এর স্কোরকে বিবেচনা করে।
ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা অর্জন করতে আপনাকে এইচএসসির আগেই ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে IELTS বা TOEFL এর কোর্স করে ভালো স্কোর অর্জন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলোর ব্যান্ড স্কোর ৬ হলেই চলে।
তবে যারা আমেরিকায় সাইন্স ফ্যাকাল্টির কোনো বিষয়ে পড়তে চান তাদের জন্য GRE (Graduate Record Examination) এবং যারা বিজনেস স্টাডিজ কিংবা আর্টসের বিষয়ে পড়তে চান তাদের জন্য GMAT (Graduate Management Admission Test) এর দক্ষতা প্রয়োজন হবে।
উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। শিক্ষার মান, সহশিক্ষা কার্যক্রম, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ, পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়া খরচ, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন দেশে পড়তে যেতে চান। কারণ, একেক দেশের শিক্ষার মান, টিউশন ফি ইত্যাদি আলাদা। তাই আগে থেকেই ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে সে দেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
দেশ বাছাই করার পর আপনার যোগ্যতার সাথে মিল রেখে সে দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করে সেগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নিন। এ কাজগুলো সময় নিয়ে করতে হবে, এজন্য কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
এছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কীভাবে বিষয় বাছাই করতে হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন পেতে চাইলে এই ব্লগটি পড়তে দেখতে পারেন।
বাংলাদেশের তুলনায় বিদেশে পড়াশোনা বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকেরই সেই ব্যয় বহন করার সক্ষমতা থাকে না। এক্ষেত্রে সবারই ইচ্ছে থাকে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করা। কিন্তু সঠিক তথ্যে বা গাইডলাইনের অভাবে আর এগোতে পারে না।
ব্লগের এই অংশে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ সম্পর্কে আমরা সংক্ষেপে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার চেষ্টা করবো।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে আপনার কিছু যোগ্যতা লাগবে। তবে এমন কিছু যোগ্যতা রয়েছে যা সব স্কলারশিপের ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। যেমন-
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার প্রথম উপায় হলো সেখানকার প্রচলিত স্কলারশিপ সম্পর্কে জানা। জার্মানি, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড এর দেশগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কিংবা আংশিক খরচে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়।
এছাড়া এসব দেশের অনেক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়-ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের এই সুযোগ দিয়ে থাকে। প্রথমে আপনার কাঙ্ক্ষিত দেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী সেটার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে খোঁজ করুন, সেখানে স্কলারশিপ সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া থাকবে। সেখানে তথ্য না থাকলে তাদের ইমেইল ঠিকানায় মেসেজ করেও এ বিষয়ে তথ্য চাইতে পারেন।
আবার কিছু ব্লগ ও ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে এসব বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া বিদেশে সরকারি স্কলারশিপের জন্য সে দেশের সরকারি ওয়েবসাইটেও খোঁজ রাখতে পারেন। নিচে এমন কিছু দেশের স্কলারশিপের ওয়েবসাইট উল্লেখ করা হলো।
দেশের নাম |
ওয়েবসাইট |
যুক্তরাজ্য |
|
যুক্তরাষ্ট্র |
|
অস্ট্রেলিয়া |
|
কানাডা |
|
সিঙ্গাপুর |
|
তুরস্ক |
স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া খুব বেশি জটিল কিছু নয়। এক্ষেত্রে প্রথমে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান সেখানে আবেদন করতে হবে, এবং বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে গ্রহণ করতে রাজি হলে তারা একটা Offer Letter পাঠাবে। এই অফার লেটারের সাপেক্ষে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো অফার লেটারে নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ থাকে, যে সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছে বাকি অফিসিয়াল কাজ সেরে নিতে হয়।
অফার লেটার পাওয়ার পর বাংলাদেশে নিযুক্ত সেদেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে তা সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে জমা দিতে হবে। এছাড়া আবেদনের সময় কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। যেমন-
এছাড়াও আরো কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হতে পারে। যা সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করলেই জানা যাবে।
উপরোক্ত কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন করলে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ সেগুলো যাচাই-বাছাই করে আপনাকে মৌখিক সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকবে এবং সবকিছু সঠিক থাকলে সে দেশে যাবার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যু করবে।
আশা করি উপরে উল্লিখিত তথ্য ও দিকনির্দেশনা আপনার বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। সর্বশেষ বলবো, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে চিন্তা করুন, এরপর সিদ্ধান্ত নিন।
©2023 Outdoor Study Consultancy | Developed & Maintaind by DUSRA Soft Ltd.